বোঝাপড়া ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর কবিতা । কবিতার আলোচনা । কবিতার প্রশ্ন উত্তর । কবিতা
রবীন্দ্রনাথ । Bojhapora kobita by
Rabindranath Tagore । class 8 । সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ । কবিতার ব্যাখ্যা । বিষয়বস্তু । মনেরে আজ কহ যে, ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে
লও সহজে । অষ্টম শ্রেণি ।
সারসংক্ষেপ >> এই কবিতায় কবির
প্রধান বক্তব্যই হল – পরিস্থিতি যাই হোক না কেন তাঁর সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য
আমাদের সবসময় তৈরি থাকতে হবে। বিভিন্য রকম অবস্থার চাপে বা পরিস্থিতির কারণে আমরা
একে অন্যের সঙ্গে মনমতো ব্যবহার করতে পারি না। কখনও আমরা অন্যকে ঠকাই, আবার অন্যরাও
আমাদের থকায়। জীবনের নিয়মই হল একে কমবেশি মেনে নেওয়া। জীবনকে এড়িয়ে চলা কোনোমতেই
সম্ভব নয়। জীবন কে মেনে না নিলে দুঃখ কমে না বরং বেরেই চলে। যে কোন বিষয়ে শুধু
শুধু অভিযোগ না করে সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করাই উচিত। একজন মানুষ আর
একজন মানুষের থেকে নানা ভাবে আলাদা। তাই এ কথা আশা করা ঠিক নয় যে, কোনও ব্যক্তি আমার
একেবারে মনের মতো হবে। একটা কথা সবসময় মনে রাখা উচিত যে, এই পৃথিবীতে কোনও
কিছুই অপরিহার্য নয়। বাস্তবতাকে মন থেকে মেনে পারলে সম্পর্কের জটিলতা দূর হয়ে যায়
এবং সুখ অ শান্তিতে জীবন ভরে যায়।
ব্যাকরণ ও
নির্মিতি >>
শব্দার্থ ।। >
বোঝাপড়া – আপস মীমাংসা; মানিয়ে নেওয়া,
মন্দ – খারাপ,
সহজে – খোলা মনে,
বিকিয়ে – বিক্রি করে,
সিকি পয়সা – পঁচিশ পয়সা,
ভবের – পৃথিবীর,
গতিক – রকমসকম, নিয়মনীতি,
তরে – জন্য,
বাকি – অবশিষ্ট,
মান্ধাতার আমল – অতি প্রাচীনকাল,
জখম – আঘাত,
ঝঞ্জা – ঝরঝাপটা,
অন্দরেতে – ভেতরে; মনের গভীরে
মুহূর্তেকে – মুহূর্তের মধ্যে,
আর্তরবে – কাতর স্বরে,
সেইতে – সেটাই,
শ্রেয় – শ্রেষ্ঠ; উপযুক্ত
অপূর্ব – যা আগে কখন হয় নি,
শঙ্কা – ভয়,
মাপে – চাহিদা মতো; মনের মতো,
ঠেকে – লাগে,
লাগি – জন্য; তরে,
বুজে – বন্ধ করে,
অশ্রুসাগার – চোখের জলের সমুদ্র,
বিশ্বভুবন – সমগ্র পৃথিবী,
মস্ত – খুব,
ডাগর – খুবই মূল্যবান,
অস্তাচলে – জীবনের শেষ বেলায়,
বিধি – বিধাতা,
সারো – সংশোধন করো,
ঘড়া – বড়ো কলশি,
সত্যরে – বাস্তবকে
বিপরীত শব্দ ।। >
ভালো – খারাপ,
মন্দ – ভালো,
আসুক – যাউক,
সহজে – কঠিনে,
সুখের – দুঃখের,
তলে – উপরে,
অন্দরেতে -- বাহিরেতে,
ভেসে – ডুবে,
অনেকখানি – একটুখানি,
মধুর – অম্ল,
মরা – বাঁচা,
বুজে – খুলে,
মস্ত – সামান্য,
আঁধার – আলো,
দোষে – গুনে,
শীঘ্র – দেরি
বাক্যরচনা ।। >
স্বভাব == অভাবে কি স্বভাব নষ্ট হয় না ?
গতিক == ছেলেটার গতিক ভালো নয়।
ফাঁকি == কোনও কাজে ফাঁকি দেওয়া উচিত নয়।
টানাটানি == বেহিসাবি খরচ করলে জীবনে টাকার টানাটানি হয়।
অস্তাছলে == সূর্য অস্তাছলে গেছে।
বিবাদ == বিবাদ করা উচিত নয়।
নিচের শব্দ গুলির
দল বিশ্লেষণ করে যুক্ত দল ও রুদ্ধ দল চিহ্নিত করো।
[ বোঝাপড়া, কতকটা, সত্যেরে, পাঁজরগুলো, বিশ্বভুবন, অশ্রুসাগার ]
উত্তর > ।
বোঝাপড়া >। বো (মুক্ত দল) ঝা (মুক্ত দল) প (মুক্ত দল) ড়া (মুক্ত
দল)
কতকটা >। ক (মুক্ত দল) তক্ (রুদ্ধ দল) টা (মুক্ত দল)
সত্যেরে >। সত্ (রুদ্ধ দল) তে (মুক্ত দল) রে (মুক্ত দল)
পাঁজর - গুলো >। পাঁ (মুক্ত দল) জর্ (রুদ্ধ দল) গু (মুক্ত দল) লো (মুক্ত দল)
বিশ্ব ভুবন >। বিশ্ (রুদ্ধ দল) শো (মুক্ত দল) ভু (মুক্ত দল) বন্ (রুদ্ধ দল)
অশ্রু সাগর >। অশ্ (রুদ্ধ দল) রু (মুক্ত দল) সা (মুক্ত দল) গর্ (রুদ্ধ দল)
নিচের প্রতিটি
শব্দের তিনটি করে সমার্থক শব্দ লেখো ?
[ মন, জখম, ঝঞ্ঝা, ঝগড়া, সামান্য, সামান্য, আকাশ ]
উত্তর > ।
মন > হৃদয়, চিত্ত, অন্তর
জখম > ঘা, আঘাত, চোট
ঝঞ্ঝা > ঝড়, ঝটিকা, বাত্যা
ঝগড়া > বিবাদ, কলহ, তর্কাতর্কি
সামান্য > কম, নগণ্য, অল্প
শঙ্কা > ভয়, ডর, আতঙ্ক
আকাশ > গগন, নভ, অম্বর
নিচের প্রতিটি
শব্দের বিপরীতার্থক শব্দজোড় তৈরি করে বাক্য রচনা করো ?
[ আঁধার, সত্য, দোষ, আকাশ, সুখ ]
উত্তর > ।
আঁধার > (আলো-আঁধার) – জীবনের আলো-আঁধারের খেলায় অনেকেই নিজেকে
হারিয়ে ফেলে।
সত্য > (সত্য -মিথ্যা) -- সত্য -মিথ্যা যাচাই করেই সিদ্ধান্ত
নেওয়া উচিত।
দোষ > (দোষ -গুন) -- দোষ -গুন সব মানুষেরই থাকে।
আকাশ > (আকাশ -পাতাল) -- আকাশ -পাতাল না ভেবে মন দিয়ে পড়াশোনা
করা উচিত।
সুখ > (সুখ -দুঃখ) -- জীবনে সুখ -দুঃখ থাকবেই।
নিচের প্রশ্ন গুলির
উত্তর দাও?
১। জোড়াসাঁকোর
ঠাকুরবাড়ি ঠেকে প্রকাশিত কোন পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন ?
উত্তর >।‘ভারতী’ এবং ‘বালক’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন।
২। ভারতের কোন
প্রতিবেশী দেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গান জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয় ?
উত্তর >। ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
লেখা গান জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয় ।
৩। কিভাবে মনের সঙ্গে
বোঝাপড়া করতে হবে ?
উত্তর >। মন তাঁর চাহিদামত বস্তু না পেলে ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু
স্বাভাবিক নিয়মেই জীবনে চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে মিলন ঘটে না। তাই কি পেলাম না তা
নিয়ে সারা জীবন হাহুতাশ করলে জীবন শুধুই ব্যর্থ হয়। তাই পাওয়া না পাওয়ার মধ্যে
ভারসাম্য বজায় রেখে মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে।
৪। “ঘটনা সামান্য খুবই” – কোন ঘটনার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর >। মানুষের জীবনে প্রায়ই আচমকা আঘাত পেতে হয়। এটা কোনও
বড়ো ঘটনা নয়। কেউ সেই আঘাত মানিয়ে নিতে পারে, আবার কেউ তা পারে না। মানুষের এই সামান্য আঘাত পাওয়ার
ঘটনাকে “সামান্য ঘটনা” বলা হয়েছে।
৫। “মরণ এলে হঠাৎ দেখি / মরার চেয়ে বাচাই ভালো” –
ব্যাখ্যা করো।
উত্তর >। জীবনের দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মানুষ অনেক সময়
নিজের মৃত্যু কামনা করে। কিন্তু যখন সে মৃত্যুর মুখমুখি হয়, তখন তাঁর এই
উপলব্ধি হয় যে মৃত্যুর চেয়ে জীবন অনেক বেশি সুন্দর।
৬। “সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়।“ – কোনটি সবার চেয়ে শ্রেয়?
উত্তর >। সংসারের জটিলাটার ঘূর্ণিপাকে নিজেকে ডুবিয়ে দেওয়া
উচিত নয়। তাতে দুঃখ কষ্ট বেড়ে যায়। বরং সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া উছিত।
৭। “তাহারে বাদ দিয়েও দেখি / বিশ্ব ভুবন মস্ত ডাগর ।” –
উদ্ধৃতিটির মধ্যদিয়ে জীবনের কোন সত্য প্রকাশ পেয়েছে।
উত্তর >। সদা পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে কোনও কিছুই স্থায়ী নয়।
প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে প্রিয়জনদের হারিয়ে মানুষ শোকগ্রস্ত হলেও পৃথিবী আপন নিয়মে
এগিয়ে চলে। উদ্ধৃতিটির মধ্যদিয়ে জীবনের এই সত্যই প্রকাশ পেয়েছে।
৮। “দোহায় তবে এ কার্যটা / যত শীঘ্র পারো সারো।” – কবি
কোন কার্য এর কথা বলেছেন ?
উত্তর >। জীবনে কি পেলাম না তাঁর হিসাব করতে গিয়ে আমরা আসলে
সুখ হারিয়ে হাহাকার করতে থাকি। হাহাকার করে সময় নষ্ট করাটাই হল ‘এ কার্য’।
শীঘ্র সারতে হবে
বলার অর্থ হল তাড়াতাড়ি সংশোধন করতে হবে। হাহাকার করলে দুঃখ ছাড়া কোনদিন সুখ লাভ
করা সম্ভব নয়। তাই হাহাকারের পরিবর্তে মনের মধ্যে বাস্তবের সাথে বোঝাপড়া করে নিয়ে
সুখ খুঁজে নিতে হবে।
৯। “অনেক ঝঞ্ঝা কাটিয়ে বুঝি / এলে সুখের
বন্দরেতে” – ‘ঝঞ্ঝা কাটিয়ে আসা’ বলতে কি বোঝ ?
উত্তর >। সমুদ্র পথে কোনও জাহাজকে অনেক ঝড় ঝঞ্ঝা, উত্তাল ঢেউ, ও অন্যান্য অনেক
বিপদ কাটিয়ে বন্দরে ফিরতে হয়। ঠিক সেই ভাবেই জীবন পথে মানুষকে নানা বিপদ আপদ, দুঃখ কষ্ট, বাধাবিপত্তি জয় করে
সাফল্য অর্জন করতে হয়। এই বাধাবিপত্তি জয় করাই
হল ‘ঝঞ্ঝা কাটিয়ে আসা’।
১০। কখন আঁধার ঘরে
প্রদীপ জ্বালানো সম্ভব ?
উত্তর >। আঁধার ঘরে প্রদীপ জ্বালানোর অর্থ হল হাহাকার পূর্ণ
জীবনকে আনন্দে ভরিয়ে তোলা। এটা তখনি সম্ভব যখন মানুষের মন পাওয়া না পাওয়ার হিসাব
কষা বন্ধ করে সবকিছুকে সহজ ভাবে নেওয়া।
১১। “তেমন করে হাত বারালে / সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি্” –
উদ্ধৃতিটির নিহিতার্থ স্পষ্ট করো।
উত্তর >। সুখ বস্তুর মধ্যে থাকে না, থাকে উপলব্ধির
মধ্যে। কিন্তু পার্থিব বস্তু না পাওয়ার বেদনাআমাদের মন খারাপ করে দেয়। তাই দরকার
সামর্থের সঙ্গে চাহিদার সামঞ্জস্য বিদান। তাহলে জীবনে খুব সহজেই সুখী হওয়া যায়।
১২। “ভালো মন্দ যাহাই আসুক / সত্যেরে লও সহজে” –
জীবনে চলার পথে নানা বাধাকে তুমি কিভাবে অতিক্রম করবে ?
উত্তর > মনের জোর আর আত্মবিশ্বাস আমাকে
শক্তি জোগাবে সব বাধা অতিক্রম করতে। দুঃখে যেমন একেবারে ভেঙ্গে পড়ব না, তেমনই আনন্দেও
সম্পূর্ণ আত্মহারা হব না। তা ছাড়া, মা বাবা ও অন্যান্য
গুরুজনদের উপদেশ, মনিষীদের বানী আমাদের চলার পথের সব বাধা দূর করতে
আমেদের সাহায্য করবে।
১৩। “ভুলে যা ভাই, কাহার সঙ্গে / কতটুকু তফাৎ হলো।” – এই উদ্ধৃতিটির
মধ্যদিয়ে জীবনের চলার ক্ষেত্রে কোন পথের ঠিকানা মেলে ?
উত্তর >। আমরা সাধারন মানুষ জীবনের ছোটো ছোটো চাওয়া পাওয়ার
মধ্যেই নিজেদের আতকে রাখি। কম বেশি, লাভ ক্ষতি , এই সব হিসাবেই নিজেদের ব্যস্ত রাখি। কিন্তু জীবনের
আসল পথ হল সমস্ত তফাৎ, পার্থক্য ভুলে সবকিছুর মধ্যে আনন্দ, মঙ্গল খুঁজে নেওয়া।
১৪। “তেমন করে হাত বাড়ালে / সুখ পাওয়া যায় অনেক
খানি” – ‘তেমন করে’ কথাটির অর্থ বুঝিয়ে
দাও । এখানে কবি কি ধরনের সুখের ইঙ্গিত করেছেন লেখো।
উত্তর > । বেশির ভাগ মানুষই বিভিন্ন বস্তুর মধ্য দিয়ে সুখ
পাওয়ার চেষ্টা করে। বস্তুটি না পেলে সে দুঃখে ভেঙ্গে পড়ে। আসলে মানুষ যদি বুঝত যে
সুখ উপলব্ধি করার মধ্যেই সুখের অবস্থান, তাহলে সে আনন্দই সব সময় পেত, দুঃখ কষ্ট তাকে
স্পর্শ করতে পারত না। ‘তেমন করে’ বলতে এই উপলব্ধিকেই বোঝান হয়েছে।
এখানে স্বার্থপরতা নয়, পরার্থপরতার কথাই বলা হয়েছে। বোঝাপড়ার মাধ্যমে মনটাকে যদি উদার করে তোলা যায়, তাহলে ব্যক্তি আমি এর দুঃখ কষ্ট থেকে মানব আমি এর সুখের রাজ্যে পৌঁছান যায়।
0 Comments