বনভোজনের ব্যাপার । নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় । আলোচনা । প্রশ্ন উত্তর । Banvojaner Byapar (Banbhojner Byapar) by Narayn Gangopadhyay । class 8 । সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ । বিষয়বস্তু । অষ্টম শ্রেণি ।
নামকরণ >>। সাহিত্যের যে কোন শাখায় নামকরণের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ নামকরণের মধ্য দিয়ে সাহিত্যের মূল ভাবটি ফুটিয়ে তোলা হয়ে থাকে। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে দেখা যায় হাবুল, কেবলা, প্যালা আর দলের মধ্যমণি টেনিদা বনভোজনের পরিকল্পনা করেছে। খুবই খরচ সাপেক্ষ বাদশাহী খাবারের যে লিস্ট প্রথমে করা হয় তা বাতিল করে দ্বিতীয় লিস্ট তৈরি করা হয়। রাজহাঁসের ডিম সংগ্রহ করতে গিয়ে প্যালার রাজহাঁসের কামড়ে রক্তারক্তি হওয়া, ট্রেনে বসে টেনিদার একার লেডিকেনির হাঁড়ি সাফ করে দেওয়া, ট্রেন থেকে নেমে সকলের নাকাল হয়ে বাগানবাড়িতে পৌঁছানো - এসবের সরস বর্ণনা রয়েছে গল্পে। এই গল্পের প্রধান বিষয় বনভোজন হলেও আয়োজকদের সেই সাধের বনভোজন আর হয়ে ওঠেনি। গল্পের শেষে দেখা যায় খিদের চোটে সকলে জলপাই খেয়ে পেট ভরানোর চেষ্টা করেছে। বনভোজনের আয়োজন হয়েছে, বনভোজনে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বনভোজন হয়নি। বনভোজন নিয়েই গোটা গল্পের কাহিনী গড়ে উঠেছে বলেই ‘বনভোজনের ব্যাপার’ নামক নামটি যথাযথ ও সার্থক হয়েছে।
সারসংক্ষেপ >> পটলডাঙ্গার চারমূর্তি টেনিদা, হাবুল, কেবল, আর প্যালার এক বনভোজনের আয়োজন কীভাবে পন্ড হয়েছিল তাই এই গল্পের মুখ্য বিষয়। বাদশাহি খাবারের তালিকা- বিরিয়ানি, পোলাও, কোরমা, কোপ্তা, কাবাব, মাছের চপ ইত্যাদি পয়সার অভাবে প্রথমেই বাতিল হয়ে যায়। পরে দ্বিতীয় তালিকায় ঠিক হয় খিচুড়ি, আলুভাজা, মাছের কালিয়া, আমের আচার, রসগোল্লা ও লেডিকেনি। রাজহাঁসের ডিম আনতে গিয়ে হাঁসের কামড় খেয়ে প্যালার রক্তারক্তি হওয়া। ট্রেনে বসে টেনুদা একাই লেডিকেনির হাঁড়ি সাবাড় করে দেয়। ট্রেন থেকে নেমে কাদা ভরা পেছল রাস্তায় হাবুল আচার খেয়ে ডিম গুলো ভেঙে ফেলে, প্যালা আছার খেয়ে আচারের বয়াম ভাঙ্গে। সবশেষে টেনিদা আছাড় খাওয়ায় রসগোল্লা গুলো খানার জলে ভাসতে থাকে। এরপর বাগানবাড়িতে পৌঁছে রান্নার তোড়জোড় শুরু হয়। প্যালা কাঁচা তেল মাছ ছেড়ে দেওয়ায় মাছের হালুয়া তৈরি হয়। টেনিদার তাড়া খেয়ে সে দৌড়ে পালায়। খিচুড়ি রান্নার বদলে টেনিদা নারকেল গাছে হেলান দিয়ে ঘুমাতে থাকে আর একপাল বাঁদর এসে চাল, ডাল, আলু সাবার করে দেয়। শেষপর্যন্ত গাছের পাকা জলপাই খেয়ে সবাই খিদে মেটায়। এভাবেই চারমূর্তির বনভোজনের পালা শেষ হয়।
ব্যাকরণ ও নির্মিতি >>।
শব্দার্থ >>।
॥• নোলা => জীভ
॥• কোর্মা => মাছ ও মাংস ভেজে মসলা দিয়ে রান্না করা এক ধরনের তুর্কি খাবার
॥• মুর্গ মুসল্লম => মসলা দিয়ে কসানো মুরগির মাংসের এক ধরনের পদ
॥• বিরিয়ানি পোলাও => মাংস ও মসলা দিয়ে তৈরি
ভাত
॥• কুঁদরু => পটল জাতীয় সবজি
॥• ঠেকুয়া => ছাতু ও সুজি দিয়ে তৈরি বিস্কুটের মতো এক ধরনের খাবার
॥• চেইত্যা => চটে; রেগে
॥• পোলাপান => ছেলেমানুষ
॥• লিস্টি => তালিকা
॥• ট্যাঁকখালি => পয়সাকরিহীন
॥• গাট্টা => মুঠো করা আঙুলের
গাঁট দিয়ে মারা
॥• আইটেম => (এখানে) পদ
॥• পিকনিক => বনভোজন
॥• চালিয়াতি => চালবাজি; ব্যাজার
॥• ব্যাজার => অখুশি হওয়ার ভাব
॥• গেরো => বিপদ; জ়্বালা
॥• খলিফা => ওস্তাদ
॥• চিয়ার আপ => উৎসারিত করা
॥• ফেরববাজ => ধাপ্পাবাজ
॥• সাবার => শেষ
॥• মতলব => ফন্দি
॥• প্যাট => পেট
॥• দ্রাক্ষাফল => আঙ্গুর
॥• খাট্টা => টক
॥• স্পিকটি নট => চুপ করে থাকা
॥• অষ্টরম্ভা => কিছুই না; ফাঁকি
॥• ইস্টুপিড => বুদ্ধু; হাঁদারাম
॥• পালাজর => জ্বর
আসে, চলে যায়, আবার আসে; পালা করে জ্বরের আশা ও যাওয়া
॥• পিলে => প্লীহা
॥• হরিমটর => উপবাস
॥• দ্যাখছস => দেখেছিস
॥• ঘাটলা => চাতাল
॥• অগত্যা => অন্য কোন
উপায় না থাকায়
॥• ইউরেকা => আবিষ্কারের আনন্দে চিৎকার করা
বিপরীত শব্দ
॥• বুদ্ধি => নির্বুদ্ধিতা
॥• অখাদ্য => সুখাদ্য
॥• বিচ্ছিরি => সুন্দর
॥• জমিদার => প্রজা
॥• ভদ্রলোক => ছোটোলোক
॥• রাজকীয় => দরিদ্রতা
॥• রাজি => গড়রাজি
॥• উৎসাহ => নিরুৎসাহ
॥• চটপাট => ধীরেসুস্থে
॥• কাঁচা => পাকা,
॥• ভুল => ঠিক
॥• শূন্যে => মাটিতে
॥• বেড়ে => যাচ্ছেতাই
॥• শোকে => আনন্দে
॥• মন্দ => ভালো
॥• গুরুপাক => লঘুপাক
॥• অতিশয় => সামান্য
॥• খাট্টা => মিঠা
॥• কঠিন => সহজ
॥• অমৃত => গরল, বিশ
॥• শোকসভা => আনন্দ উৎসব
বাক্য রচনা
॥• দীর্ঘশ্বাস => পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর পর যাতে দীর্ঘশ্বাস
ফেলতে না হয় সেজন্য এখন থেকে পড়াশোনা করা দরকার।
॥• মন্ত্রমুগ্ধ => সেই দৃশ্য দেখে আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো
সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লাম।
॥• তরিবত => টেনিদার তরিবত করে খাওয়া দেখে খিদেয় আমার নাড়িভুঁড়ি
জ্বলতে লাগলো।
॥• আবিষ্কার => সে সময় গাছে ঝুলতে থাকা পাকা
জলপাইয়ের আবিষ্কার ছিল হাতের মুঠোয় চাঁদ পাওয়ার মতোই।
॥• ব্যাজার => টেনিদার কথা শুনে
কেবলা ব্যাজার মুখ করে বসে রইল।
॥• ফস => আমি ফস করে বলে ফেললাম কথাটা।
॥• গুরুপাক => লোভের বশে গুরুপাক খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত নয়।
॥• হুংকার => টেনিদার হুংকার শুনে হাবুল প্রাণপণে দৌড়ে পালালো।
॥• জ্বল জ্বল => একটা করে লেডিকেনি খাওয়ার সময় আমরা টেনিদার দিকে জ্বল জ্বল করে তাকিয়ে রইলাম।
0 Comments