একটি চড়ুই পাখি । তারাপদ রায় । আলোচনা । প্রশ্ন উত্তর । Ekti Charai Pakhi by Tarapada Ray । class 8 । সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ । বিষয়বস্তু । অষ্টম শ্রেণি ।
কবি পরিচিতি ।।
বর্তমান বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর তারাপদ রায়ের
জন্ম হয়। তিনি বিন্দুবাসিনী
উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে পড়াশোনার জন্য কলকাতায় আসেন। তিনি সেন্ট্রাল কলকাতা কলেজ, বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ থেকে অর্থবিদ্যা নিয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কিছুদিন হাবড়ার একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তারাপদ রায় ছিলেন বিশিষ্ট কবি ও রসরচনাকার। হালকা মেজাজে গুরুগম্ভীর কথা ফুটিয়ে তোলায় তিনি
খুবই পটু ছিলেন। তাঁর কবিতাতেও
একাধিক গুরুগম্ভীর বিষয়কে খুবই হালকাভাবে তুলে ধরেছেন বারবার। শিশুসাহিত্যের ডোডো ও তাতাই চরিত্র দুটি তাঁরই সৃষ্টি। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— তোমার প্রতিমা, নীল দিগন্তে এখন
ম্যাজিক, কোথায় যাচ্ছেন তারাপদ বাবু, দরিদ্ররেখা জলের মতো কবিতা প্রভৃতি। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ২৫ আগস্ট এই বিশিষ্ট সাহিত্যিক পরলোক গমন করেন ।
নামকরণ ।।
সাহিত্যের নামকরণের মাধ্যমেই বিষয়বস্তু সম্বন্ধে আগাম ধারণা লাভ করা যায়। কবির ঘরে একটি চালাক চড়ুই পাখি। বাসা বেঁধেছে সন্ধে হলেই সে তার বাসায় ফিরে আসে। এ বাড়ি- ও বাড়ি থেকে
খড়কুটো, ধান ইত্যাদি নিয়ে এসে কবির
ঘর নোংরা করে পাখিটির হাবভাবে কবির মনে হয় যেন সে ভাবে কবি মারা গেলে সেই ঘরদোর
সবকিছুর অধিকারী সেই হবে। আবার কখনও তার চোখে তাচ্ছিল্যের চাউনি — যেন তার দয়ার শরীর বলে সে এই বাড়িতে পড়ে রয়েছে ।ইচ্ছে করলেই যেখানে খুশি চলে যেতে পারে। তবু সে যায় না। রাতের নির্জনতায় নিজের নিজের আলাদা অস্তিত্ব নিয়ে
একই ঘরে কবি আর চড়ুইয়ের বাস। এইভাবে পুরো কবিতাটিতে ছোট্ট এক চড়ুই পাখিকে নিয়ে কবির আবেগ ও অনুভূতি প্রকাশিত
হয়েছে। তাই ‘একটি চড়ুই পাখি' শিরোনামটি যথাযথ
হয়েছে বলা চলে।
সারসংক্ষেপ ।।
একটি চড়ুই পাখি
কবির ঘরে বাসা বেঁধেছে। এ বাড়ি-ও বাড়ি থেকে খড়কুটো, ধান ইত্যাদি নিয়ে এসে সে ঘরদোর নোংরা করে। কখনও তার দৃষ্টিতে লোভের প্রকাশ | কবি মারা গেলে এই সব কিছু তার হবে এই ভাব ফুটে ওঠে। আবার কখনও দয়ামায়া তাচ্ছিল্য ফুটে ওঠে দৃষ্টিতে যেন
যে-কোনো মুহূর্তেই সে সব কিছু ছেড়ে অন্যদের
কাছে চলে যেতে পারে। তবু সে যায় না। চড়ুই পাখির রূপকের মাধ্যমে কবি নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন কবিতায়। প্রতিটি মানুষ আলাদা, তাদের ভাবনাচিন্তায় আপাত মিল থাকলেও আসলে ফারাক, দূরত্ব অনেকটাই। এই দূরত্ব কোনোকালেই ঘোচে না। মনের দূরত্ব লুকিয়ে একে অন্যের কাছাকাছি আসে, একে অন্যের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু তারা আসলে একা, নিভৃত গোপন পথের যাত্রী।
ব্যাকরণ ও নির্মিতি
* শব্দার্থ
• চতুর => চালাক
• ফেরে => ফিরে আসে আসে
• খড়কুটো => বিচালি, শুকনো ধানগাছ
• কিচিমিচি => পাখির ডাক
• কৌতূহলী => আগ্রহী
• বিধাতা => ঈশ্বর
• কার্নিশ => ছাদের বেরিয়ে থাকা
অংশ
• চাহনি => নজর
• তাচ্ছিল্য => অবহেলা, অবজ্ঞা
• নিতান্ত => নেহাত
• নির্জন => জনহীন
* বিপরীত শব্দ
• চতুর => হাবাগোবা
• সন্ধ্যা => সকাল
• টুকরো => গোটা
• কৌতূহলী => উদাসীন
• নির্জন => জনপূর্ণ
* বাক্যরচনা
• চতুর: পীযূষ দিন দিন চতুর হয়ে উঠছে।
• অন্ধকার: ঘন অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
* নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর লেখো:
প্রশ্ন॥ তারাপদ রায় কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর => তারাপদ রায় ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন॥ তাঁর রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর => তাঁর রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম হল – তোমার প্রতিমা এবং নীল দিগন্তে এখন ম্যাজিক।
প্রশ্ন॥ কবিতায় চড়ুই
পাখিটিকে কোথায় বাসা বাঁধতে দেখা যায়?
উত্তর => কবিতায় চড়ুই পাখিটিকে
কবির ঘরে বাসা বাঁধতে দেখা যায়।
প্রশ্ন॥ চড়ুই পাখি এখান সেখান থেকে কী সংগ্রহ করে আনে।
উত্তর => চড়ুই পাখি খড়কুটো, ধান সংগ্রহ করে
নিয়ে আসে এখান সেখান থেকে।
প্রশ্ন॥ কবির ঘরে কোন্ কোন্
জিনিস চড়ুই পাখিটির চোখে পড়ে?
উত্তর => কবির ঘরে দরজা-জানালা, টেবিলে ফুলদানি, বই- খাতা চড়ুই পাখিটির চোখে পড়ে।
প্রশ্ন॥ ইচ্ছে হলেই চড়ুই পাখি কোথায় চলে যেতে পারে ?
উত্তর => ইচ্ছে হলেই চড়ই পাখিটি এপাড়ার ওপাড়ার পালেদের বোসেদের বাড়ি চলে
যেতে পারে।
প্রশ্ন॥ “চতুর চতুই এক ঘুরে
ফিরে আমার ঘরেই বাসা বাঁধে'।” - চড়ুই পাখিকে এখানে 'চতুর' বলা হল কেন ?
উত্তর => একটি চড়ই পাখি' কবিতায় কবি তাঁর ঘরে বাসা তৈরি করা চড়ুই পাখিটিকে 'চতুর' অর্থাৎ বেশ চালাক বলেছেন। সে চালাক কারণ 'সন্ধ্যা' নামলে অর্থাৎ কবির মন
বিষণ্ণতায় ভরে গেলে সে বাসায় আসে। মানুষ যখন বিষণ্ণতায় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে তখন সে সঙ্গী খোঁজে। চড়ুই পাখিটি এটা বোঝে বলেই সন্ধেবেলায় কবির কাছে
ফিরে আসে । তাই কবি তাকে চতুর
বলেছেন।
* নীচের শব্দগুলির প্রকৃতি-প্রত্যয় নির্ণয় করো:
(সন্ধ্যা, কৌতূহলী, দৃষ্টি)
উত্তর =>
• সন্ধ্যা => সম্ + ধ্যৈ + আ + আ
• কৌতূহলী => কুতূহল + অ + ঈ
• দৃষ্টি => দৃশ + তি
* নীচের বাক্যগুলির ক্রিয়ার কাল নির্ণয় করো:
[ক্রিয়ার কাল নির্ণয় করতে বললে কেবল সেটি বর্তমান, অতীত না ভবিষ্যৎ তা লিখতে হয়। ]
প্রশ্ন॥ চতুর চতুই এক ঘুরে ফিরে আমার ঘরেই বাসা বাঁধে।
উত্তর => (নিত্য) বর্তমান
প্রশ্ন॥ বই-খাতা এসব আমারই হবে।
উত্তর => (সাধারণ) ভবিষ্যৎ |
প্রশ্ন॥ আবার কার্নিশে বসে।
উত্তর => (নিত্য) বর্তমান ।
প্রশ্ন॥ এই বাজে ঘরে আছি।
উত্তর => (ঘটমান) বর্তমান |
প্রশ্ন॥ ইচ্ছে হলে আজই যেতে
পারি।
উত্তর => (সাধারণ) ভবিষ্যৎ
* নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও:
প্রশ্ন॥ অন্ধকার ঠোঁটে নিয়ে সন্ধ্যা ফেরে যেই সে'ও ফেরে। (সরল বাক্যে)
উত্তর => অন্ধকার ঠোঁটে নিয়ে
সন্ধ্যা ফেরার সময় সেও ফেরে।
প্রশ্ন॥ কখনো সে কাছাকাছি
কৌতূহলী দুই চোখ মেলে অবাক দৃষ্টিতে দেখে। (নিম্নরেখাঙ্কিত শব্দের বিশেষ্যের
রূপটি লিখে বাক্যটি আবার লেখো)
উত্তর => কখনও সে কাছাকাছি কৌতূহল ভরা দুই চোখ মেলে অবাক দৃষ্টিতে দেখে |
প্রশ্ন॥ আমাকেই দেবেন বিধাতা। (না-সূচক বাক্যে)
উত্তর => আমাকে ছাড়া আর কাউকে দেবেন না বিধাতা।
প্রশ্ন॥ এই বাজে ঘরে আছি
নিতান্ত মায়ার শরীর আমার তাই। (জটিল বাক্যে)
উত্তর => যেহেতু নিতান্ত মায়ার শরীর আমার তাই এই বাজে ঘরে আছি।
প্রশ্ন॥ ইচ্ছে হলে আজই যেতে
পারি এপাড়ায় ওপাড়ায় পালেদের বোসেদের বাড়ি। (জটিল বাক্যে)
উত্তর => যদি ইচ্ছে হয় তবে আজই যেতে পারি ও পাড়ায়-ও পাড়ায় পালেদের বোসেদের বাড়ি।
* নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করো:
(চড়ুই, ধান, চোখ, জানলা, দোর, ইচ্ছে, পাখি)
উত্তর =>
• চড়ুই = চড়াই > চড়ুই; স্বরসংগতি
• ধান = ধান্য > ধান; ব্যঞ্জনলোপ
• চোখ = চক্ষু > চোখ; ধ্বনিলোপ
• জানলা = জানালা > জানলা; ধ্বনিলোপ
• দোর = দ্বার > দুয়ার > দোর; স্বরাগম
• ইচ্ছে = ইচ্ছা > ইচ্ছে; স্বরসংগতি
• পাখি = পক্ষী > পাখি: সমীকরণ, ব্যঞ্জনলোপ, ও ক্ষতিপূরক দীঘীভবন
* ‘চোখ' শব্দটিকে পৃথক পৃথক অর্থে ব্যবহার করে বাক্য রচনা করো ।
উত্তর =>
• চোখ (দৃষ্টিশক্তি) => চোখের সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
• চোখ (নজর) => ছেলেটাকে চোখে চোখে রাখা দরকার।
• চোখ (দূরদর্শিতা) => আজকাল মানুষ চেনা খুব শক্ত।
• চোখ (মেজাজ) => আমায় চোখ দেখিয়ে লাভ নেই।
• চোখ (অসুখ) => ছেলেটির চোখ উঠেছে, তাই তাকে ডাক্তারের কাছে
নিয়ে যাও উচিত।
0 Comments