পথচলতি । সুনীতিকুমার
চট্টোপাধ্যায় । আলোচনা । প্রশ্ন উত্তর । Pathchalti by Suniti Kumar Chatterji । class 8 । সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ । বিষয়বস্তু । অষ্টম শ্রেণি । ।
১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ নভেম্বর হাওড়া জেলার শিবপুরে এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে সুনীতিকুমারের জন্ম হয়। তাঁর বাবার নাম হরিদাস চট্টোপাধ্যায়। পড়াশোনায় মেধাবী সুনীতিকুমার বিএ এবং এম এ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি প্রথমে বিদ্যাসাগর কলেজে এবং পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি ছিলেন ভাষাতাত্ত্বিক ও বহুভাষাবিদ। তাঁর লেখা ‘The Origin and Development of the Bengali Language’ গ্রন্থের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর অন্যান্য কয়েকটি বিচিত্র বিষয়ের উপর লেখা গ্রন্থ হল- দ্বীপময় ভারত ও শ্যামদেশ, ইউরোপ ভ্রমণ, পশ্চিমের যাত্রী, বাঙ্গালা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা, ভারতের ভাষা ও ভাষা সমস্যা ইত্যাদি। তাঁর আত্মজীবনীর নাম' জীবনকথা'। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মে এই বিশিষ্ট ভাষাবিদের জীবনাবসান ঘটে।
নামকরণ
>>।
লেখক সুনীতিকুমার
চট্টোপাধ্যায় একবার গয়ায় অবস্থিত শ্বশুরবাড়ি থেকে কলকাতা ফিরছিলেন দেহরাদুন
এক্সপ্রেসে চড়ে। এই ট্রেনযাত্রায় রেলের
কামরায় তাঁর সহযাত্রীরা ছিলেন ১৬ জন আফগান কাবুলিওয়ালা। নিতান্ত অবাঞ্ছিত এক বাঙালি সহযাত্রী কী করে পশতুভাষী আফগানদের কাছে পরম আদরের
ও শ্রদ্ধেয় ‘আলেম’ হয়ে উঠেছিলেন, সেই কাহিনি শুনিয়েছেন লেখক। এই প্রসঙ্গে লেখক
বরিশালের এক ব্যবসায়ী কাবুলিওয়ালার কথা, পশতুভাষী কবি খুশ-হাল খাঁ খট্টক, আদম খান-দুরখানির গল্পের কথা শুনিয়েছেন। কাবুলিওয়ালাদের সংস্কৃতি ও ধর্মের কিছু কথাও লেখক পাঠ্যাংশে উল্লেখ করেছেন। একজন বাঙালি ভদ্রলোকের আফগানিস্তানে পাঠানদের মধ্যে কাটানোর অভিজ্ঞতার কথা
লেখক প্রবর্তক পত্রিকায় পড়েছিলেন। কিন্তু
কাবুলিওয়ালাদের মধ্যে সময় কাটানোর লেখকের নিজের এই অভিজ্ঞতা ছিল একেবারেই অনন্য। আর সেই অভিজ্ঞতা তিনি লাভ করেছিলেন পাঠানদের সাথে একসঙ্গে পথ চলাকে কেন্দ্র
করে। তাই ‘পথচলতি’ নামকরণটি যথোপযুক্ত
হয়েছে।
সারসংক্ষেপ >>।
সময়টা সম্ভবত ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের শীতকাল। বিখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় গয়ায় অবস্থিত তার শ্বশুরবাড়ি থেকে দেহরাদুন এক্সপ্রেসে চড়ে কলকাতায় ফেরার ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ট্রেন প্ল্যাটফর্মে যখন ঢুকল তখন লেখক দেখলেন যে কামরাগুলিতে অসম্ভব ভিড়। তাঁর কাছে ছিল মধ্যম শ্রেণির একটি রিটার্ন টিকিট। তাই তিনি কোন্ কামরাতে অপেক্ষাকৃত কম ভিড় রয়েছে তা দেখার জন্য সামনের (ইঞ্জিনের) দিকে এগোতে লাগলেন। দেখলেন একটা তৃতীয় শ্রেণির বগির কাছে লোকজনের ভিড় একেবারেই নেই। কাছে গিয়ে বুঝলেন কয়েকজন কাবুলিও বগিটি অধিকার করে রেখেছে। কাউকেই সেদিকে ঘেঁসতে দিচ্ছে না। লেখক তাঁর অল্প স্বল্প ফারসি ভাষা জানার উপর ভর করে কামরাটিতে ওঠার চেষ্টা করতেই কাবুলিওয়ালারা পশতু ভাষায় বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগল। লেখক সেগুলির উত্তর দিলেন ফারসি ভাষায়। পশতু ছিল সাধারণ আফগানদের আর ফারসি ছিল শিক্ষিতজনেরও সরকারি ভাষা। এতেই কাজ হল। কাবুলিওয়ালারা লেখককে ভেতরে ঢুকতে দিয়ে একটা পুরো বেঞ্চ ছেড়ে দিল। লেখক দেখলেন প্রায় ষোলো জন পাঠান পুরুষ কামরায় রয়েছে। এরপর তাদের সঙ্গে হিন্দুস্থানি ও বাংলায় লেখক আলাপ জমিয়ে ফেললেন। লেখক পশতু ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি খুশ-হাল খাঁ খট্টকের গজল এবং আদম খান ও দুরখানির মহব্বতের কিসসা শুনতে চাইলেন। খুব আগ্রহের সঙ্গে এক পাঠান বেসুরো গলায় গজল গেয়ে শোনাল। এককথায় লেখক তাঁর সহযাত্রীদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিলেন। রাতে গভীর ঘুমের পর সকালে উঠে দেখলেন সহযাত্রীরা রোজার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক বৃদ্ধ আফগান পরম আত্মীয়ের মতো জিজ্ঞেস করলেন লেখক রাতে ঘুমোতে পেরেছেন কি না। লেখক বেশ ভালোভাবেই কলকাতা পৌঁছালেন। ওই সহযাত্রীদের সঙ্গে ভ্রমণ করার কথা তাঁর মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে থেকে গিয়েছিল।
ব্যাকরণ
ও নির্মিতি >>।
শব্দার্থ
>>।
॥• শ্বশুরালয় => শ্বশুরবাড়ি
॥• মধ্যম শ্রেণি => প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণির মধ্যবর্তী শ্রেণি
॥• রিটার্ন টিকিট => যাওয়ার সময় কাটা ফিরে আসার টিকিট
॥• মধ্যম শ্রেণি => প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণির
মধ্যবর্তী শ্রেণি
॥• বগি => কামরা
॥• গুটিকতক => কয়েকজন
॥• ওয়াস্তে => জন্য
॥• উধর => ওদিকে
॥• জবরদস্ত => দুর্দান্তন
॥• সির্ফ => কেবল
॥• জবরদস্ত => দুর্দান্তন
॥• হুংকার => গর্জন
॥• হতভম্ব => ভ্যাবাচ্যাকা
॥• ক্যা মাঙ্গতা => কী চাইছ
॥• আলেম => বিজ্ঞ বা জ্ঞানী ব্যক্তি
॥• সমীহ => খাতির
॥• স্বস্তি => আরাম
॥• লবজ => শব্দ
॥• মর্দ => বলশালী পুরুষ
॥• ধৰ্ম => ঘাম
॥• হিং => একপ্রকার মশলা যা রান্নায়
ব্যবহৃত হয়
॥• উগ্র => কটু তীব্র
॥• সৌরভ => সুগন্ধ
॥• নাসারন্ধ্র => নাকের ফুটো
॥• ডেরা => বাসা
॥• পড়ুয়াহালি => পটুয়াখালি, বাংলাদেশের বন্দর
॥• আয়ত্ত => (এখানে) ভাষা শেখার কথা বলা হয়েছে
॥• দরদ => সহানুভূতি
॥• হিসাবনবিশ => হিসাব করার কাজ শিখছে এমন ব্যক্তি
॥• দেহাতি => একেবারে গ্রাম্য
॥• কিসসা => গল্প; কাহিনি
॥• রোজা => -রমজান মাসে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মুসলমানদের উপবাস পালন
॥• সুখসৌপ্তিক => আরামের ঘুম সম্বন্ধীয়
বিপরীত শব্দ >>।
॥• বিরাট => ছোট
॥• ঢুকব => বেরুব
॥• সাহস => ভয়
॥• উচ্চ => নিম্ন
॥• সম্মান => অসম্মান
॥• পুরো => আধখানা
॥• সুবিধা => অসুবিধা
॥• স্বস্তি => অস্বস্তি
॥• সহজ => কঠিন
॥• সামনের => পিছনের
॥• দেহাতি => শহুরে
॥• কাইল => আইজ
॥• রাইতে => দিনে
॥• যথাকালে =>অকালে
॥• শুধালেন => উত্তরিলেন
বাক্য
রচনা >>।
॥• মতলবে => হারান কোন মতলবে
আমাদের বাড়ি এসেছে বুঝতে পারছি না।
॥• সাহস => তপন জনে নামতে সাংস পেলনা।
॥• গজল => সে খুব ভালো গজল গায়।
॥• সৌরভ => শিউলি ফুলের সৌরভ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
॥• নিবিষ্টচিত্তে => সে নিবিষ্টচিত্তে পড়াশুনা করছে।
॥• হতভম্ব => হঠাৎ বাজের আওয়াজে সে হতভম্ব হয়ে গেলাম।
॥• স্বস্তি => আজ বৃষ্টি হওয়ায় সবাই স্বস্তি পেল।
নিম্নলিখিত শব্দগুলির সন্ধি বিচ্ছেদ করো:
(হুংকার, স্বস্তি, বিষয়ান্তর)
উত্তর =>
॥• হুংকার => হুম্ + কার
॥• স্বস্তি => সু + অস্তি
॥• বিষয়ান্তর => বিষয় + অন্তর
নিম্নলিখিত
শব্দগুলির প্রকৃতি-প্রত্যয় নির্ণয়
করো:
(ফিরতি, আভিজাত্য, জবরদস্ত, নিবিষ্ট উৎসাহিত)
উত্তর =>
॥• ফিরতি => ফির + তি
॥• আভিজাত্য => অভিজাত + য
॥• নিবিষ্ট => নি-বিশ্ + ত
॥• জবরদস্ত => জবর + দস্ত
॥• উৎসাহিত => উৎসাহ + হিন্ + ত
ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো:
(শীতবস্ত্র, মাতৃভাষা, শিশুসুলভ, ত্রিসীমানা)
উত্তর =>
॥• শীতবস্ত্র => শীতে পরার বস্ত্র (মধ্যপদলোপী
কর্মধারয়)
॥• মাতৃভাষা => মাতার ভাষা (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)
॥• শিশুসুলভ => শিশুর মতো সুলভ (উপমান কর্মধারয়)
॥• ত্রিসীমানা => ত্রি (তিন) সীমানার সমাহার (দ্বিগু)
নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো:
প্রশ্ন॥ গাড়িতে সেদিন অসম্ভব ভিড় দেখা গেল। (না-সূচক বাক্যে)
উত্তর ॥> গাড়িতে সেদিন একটুও
কম ভিড় দেখা গেল না।
প্রশ্ন॥ কাবুলিওয়ালা পাঠানদের মাতৃভাষা
পশতুর সম্মান তখন ছিল না। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর ॥>কাবুলিওয়ালা
পাঠানদের মাতৃভাষা পশতুর সম্মান তখন ছিল কি?
প্রশ্ন॥ কলকাতার ভাষা তাঁর আয়ত্ত হয়নি। (জটিল বাক্যে)
উত্তর ॥> কলকাতার যে ভাষা সে
ভাষা তাঁর আয়ত্ত হয়নি।
প্রশ্ন॥ দুই-একজন মাঝে-মাঝে এক-আধ লবজ ফারসি বললে বটে, কিন্তু এদের বিদ্যেও বেশিদূর এগোল না। (সরল বাক্যে)
উত্তর ॥> দুই-একজন মাঝে মাঝে এক-আধ লবজ ফারসি বললেও এদের বিদ্যে
বেশিদূর এগোল না।
প্রশ্ন॥ বাংলাদেশে তোমার ডেরা কোথায় ? (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর ॥> বাংলাদেশে কোথায় তোমার ডেরা বলো।
নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও:
প্রশ্ন॥ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের
আত্মজীবনীর নাম কী ?
উত্তর ॥> সুনীতিকুমার
চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীর নাম আত্মকথা।
প্রশ্ন॥ ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে কোন গ্রন্থ রচনার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন?
উত্তর ॥> The Origin and Development of the Bengali Language বইটি রচনার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।
প্রশ্ন॥ লেখকের কোন ট্রেন ধরার কথা ছিল ?
উত্তর ॥> লেখকের দেহরাদুন
এক্সপ্রেস ধরার কথা ছিল।
প্রশ্ন॥ একটা তৃতীয় শ্রেণির বগির কাছে একেবারেই লোকের ভিড় নেই কেন ?
উত্তর ॥> উল্লিখিত তৃতীয়
শ্রেণির বগিটি কাবুলিওয়ালাদের দখলে থাকায় সেখানে একেবারেই লোকের ভিড় নেই।
প্রশ্ন॥ পাঠানদের মাতৃভাষা কী ?
উত্তর ॥> পাঠানদের মাতৃভাষা
পশতু ।
প্রশ্ন॥ বৃদ্ধ পাঠানের ডেরা বাংলাদেশের
কোথায় ছিল ?
উত্তর ॥> বাংলাদেশের বরিশাল
জেলার পটুয়াখালির বন্দর অঞ্চলে ছিল বৃদ্ধ পাঠানের ডেরা।
প্রশ্ন॥ খুশ-হাল খাঁ খট্টক কে ছিলেন ?
উত্তর ॥> ঔরঙ্গজেবের
সমসাময়িক খুল-হাল খাঁ খটক ছিলেন পশতু ভাষার
সর্বশ্রেষ্ঠ কবি।
প্রশ্ন॥ আদম খাঁ ও দুরখানির কিসসার কাহিনি
কেমন ?
উত্তর ॥> আদম খাঁ ও দুরখানির
ভালোবাসার কাহিনি করুণরসাত্মক বা মনখারাপ করে দেওয়ার মত।
প্রশ্ন॥ এই পাঠ্যে কোন্ বাংলা মাসিকপত্রের
উল্লেখ আছে ?
উত্তর ॥> ‘প্রবর্তক’ নামক বাংলা মাসিক
পত্রের উল্লেখ রয়েছে এই 'পথচলতি' পাঠ্যাংশে।
প্রশ্ন॥ রোজার উপোসের আগে কাবুলিওয়ালারা
ভরপেট কী খেয়েছিলেন ?
উত্তর ॥> রোজার উপোসের আগে
কাবুলিওয়ালারা বড়ো বড়ো পাঠান রোটা আর কাবাব ভরপেট খেয়েছিলেন।
প্রশ্ন॥ 'তসবিহু' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর ॥> 'তসবিহু' শব্দের অর্থ জপ করার মালা।
প্রশ্ন॥ আরবি ভাষায় ঈশ্বরের নিরানব্বইটি পবিত্র ও সুন্দর নামকে কী বলা হয় ?
উত্তর ॥> আরবি ভাষায় ঈশ্বরের নিরানব্বইটি পবিত্র ও সুন্দর নামকে বলা হয় 'নব্বদ্-ও-নও অসমা-ই-হাসানা'।
0 Comments