পল্লীসমাজ । শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় । আলোচনা । প্রশ্ন উত্তর । PalliSamaj by Sarat Chandra Chattopadhyay । class 8 । সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ । বিষয়বস্তু । অষ্টম শ্রেণি ।
লেখক পরিচিতি ।।
বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়
কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক ঔপন্যাসিকদের
মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার দেবানন্দপুর
গ্রামে শরৎচন্দ্রের জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় এবং মাতার নাম
ভুবনমোহিনী দেবী। ছেলেবেলা থেকে তিনি মামার বাড়িতে বড়ো হয়েছেন। শরৎচন্দ্র
নেট্রাস পরীক্ষায় পাস করলেও এফএ পরীক্ষার ফি জোগাড় করতে না পারায় পরীক্ষায়
বসতে পারেননি। ছেলেবেলা থেকে অত্যন্ত দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন কাটালেও সাহিত্যের
প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল অসীম। বাংলার গ্রামজীবন এবং মধ্যবিত্ত মানুষের আশাআকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন সম্ভাবনা তিনি তাঁর গল্প উপন্যাসে অপূর্ব
দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল—বড়দিদি, পল্লীসমাজ, দেবদাস, বিন্দুর ছেলে, রামের সুমতি, চরিত্রহীন, গৃহদাহ, শ্রীকান্ত প্রভৃতি। তাঁর ছোটো গল্পগুলির মধ্যে 'লালু', ‘মহেশ’, 'অভাগীর স্বর্গ' পাঠকমহলে সাড়া ফেলে দেয়। পাঠ্য রচনাটি তাঁর
পল্লীসমাজ উপন্যাসের অংশবিশেষ। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাত্তারিণী স্বর্ণপদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট লাভ করেন। ১৯৩৮
খ্রিস্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি এই মহান সাহিত্যিক পরলোক গমন করেন।
নামকরণ ।।
সাহিত্যের নামকরণ একটি
গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিরোনামের মধ্যে দিয়ে বিষয়বস্তুর সম্বন্ধে ধারণা ও তার গভীরে
প্রবেশ করা যায়। আলোচ্য পাঠ্যাংশে গ্রামীণ সমাজের দলাদলি, সাধারণ মানুষদের আর্থিক দুরবস্থা, জাতপাতের বিবাদ, কৃষকের অভিশপ্ত জীবনের করুণ কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। হিংসা, দলাদলি, ষড়যন্ত্র, জমিদারের অত্যাচারের কাহিনি
এই পাঠ্যাংশে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। একইসঙ্গে বেশী ঘোষালের তৈরি
পল্লীসমাজ ভাঙার মধ্যে দিয়ে রমেশের উদ্যোগে আদর্শ পল্লীসমাজ গড়ে ওঠার কথাও
সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কোনো ব্যঞ্জনা বা রূপকের আড়ালে নয়, স্পষ্টভাবে পল্লীসমাজের ভেতরের নীচতা ও হীনতার পরিচ
তুলে ধরার পাশাপাশি লেখক তার প্রতিকারের পথটিও নির্দেশ করেছেন। তাই 'পল্লীসমাজ' শিরোনামটি যথার্থ ও সুপ্রযুক্ত হয়েছে বলা চলে।
সারসংক্ষেপ ।।
দু-দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে
একলো বিঘের মাঠ ডুবে গিয়ে চাষিদের সব ধান নষ্ট হতে বসেছে। চাষিরা এসে রমেশের কাছে
এর প্রতিকারের আবেদন জানায়। রমেশ সেই আবেদন নিয়ে যায়। জমিদার বেশী ঘোষালের
কাছে। দক্ষিণদিকের বাঁধ কেটে জল বের করে দেওয়ার অনুরোধ জানায় । কিন্তু বাঁধ
কাটলে দু-তিনশো টাকার মাছ বেরিয়ে যাবে এই অজুহাতে জমিদার বাঁধ কাটতে রাজি হয় না।
রমেশ তখন তাদের জমিদারির অন্য অংশীদার রমার কাছে গিয়ে একই অনুরোধ জানায়। রমেশ
ভেবেছিল প্রজাদের স্বার্থে রমা এই সামান্য ক্ষতিটুকু মেনে নেবে। কিন্তু রমার গলায়
বেশী ঘোষালের কথারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল। এমনকি ক্ষতির টাকাটা পর্যন্ত প্রজাদের
হয়ে রমেশকে দিয়ে দিতে বলল রমা। রমেশ রমাকে জানিয়ে দিল প্রজাদের জন্য বাঁধ সে
নিজেই কেটে দেবে রমা তাদের পিরপুরের প্রজা লাঠিয়াল আকবর ও তার ছেলেকে বাঁধ পাহারা
দেওয়ার জন্য পাঠায়। কিন্তু আকবর ও তার ছেলে রমেশের কাছে পরাজিত হয়ে রক্তাক্ত
অবস্থায় রমার কাছে ফিরে আসে। রমা ও বেশী ঘোষাল আকবরকে দিয়ে থানায় রমেশের
বিরুদ্ধে অভিযোগ লেখানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। রমার বুক ভেদ করে কান্না বেরিয়ে
আসে, তার দুচোখ জলে ভরে যায়। পরাজয়ের মুহূর্তেও সে যেন
অনেকটা স্বস্তি অনুভব করে। অতীতের স্মৃতি হাতড়ে রমেশের সুন্দর মায়াময় চেহারার
আড়ালে এমন তেজ ও দৃঢ়তার অবস্থান কল্পনা করে সারারাত কেঁদে ভাসায় রমা।
ব্যাকরণ
ও নির্মিতি
।। শব্দার্থ ।।
• অবিশ্রান্ত => অবিরাম
• অপরাহ্নবেলায় => বিকেলবেলায়
• নিকেশ => বের
• সংবরণ => নিয়ন্ত্রণ
• প্রবৃত্তি => স্পৃহা
• প্রাঙ্গণে => উঠোনে
• সাঙ্গ => শেষ
• সুমুখে => সামনে
• নিষেধ বাক্য => বারণ করা কথা
• নিষ্ঠুর => নির্দয়
• চক্ষু বিস্ফারিত => চোখ বড়ো করে
• নীচ => হীন
• ব্যাকুল => উৎকণ্ঠিত
• জুলুম => জোর খাটানো
• অগোচর => অজানা
• পাণ্ডুর => ধূসর
• মনস্তত্ত্ব => মনের গতিপ্রকৃতি
• অবকাশ => অবসর
• অকম্মাৎ => হঠাৎ
• হত্যে => ধরনা
• হেজে => পচে
• প্রাঙ্গণে => উঠোনে
• সাঙ্গ => শেষ
• সুমুখে => সামনে
• নিষেধবাক্য => বারণ করা কথা
• তদাবস্থায় => সেই অবস্থায়
• প্রত্যাখ্যান => ফিরিয়ে দেওয়া; অস্বীকার করা
• মিনতি => অনুনয় অনুরোধ
• অন্নকষ্ট => খাদ্যের সংকট
•
অভিরুচি => ইচ্ছা
• সপ্তাবের => সুসম্পর্কের
• বাগবিতণ্ডা => কথা কাটাকাটি
• আবশ্যক => প্রয়োজনীয়
• অস্বচ্ছ => ঘোলাটে
• ভীষণাকৃতি => ভয়ংকর চেহারার
• প্রবীণ => মাঝবয়সী গ্রোতে ঠোঁটের কোণে
• ঈষৎ => অল্প
• সায় => সম্মতি
• বরবাদ => নষ্ট
• ওয়ারেন্ট => গ্রেপ্তারির পরোয়ানা হাজতে জেলখানায়
• সরম => লজ্জা
• ফৈরিদি (ফরিয়াদি) => অভিযোগকারী
• নিরদাম => উদ্যমহীন
• ভর্ৎসনা => তিরষ্কার
• অনুপ্লাবিত => চোখের জলে ভাসা
• হেতু => কারণ
• নিরন্তর => সবসময়
• সুকুমার => সুন্দর
• স্বচ্ছন্দে => অনায়াসে
• অকথ্য => কথার অযোগ্য
।। বিপরীত শব্দ ।।
• ক্রুদ্ধ => শান্ত
• নিরুদ্যম => উদায়
• অপমান => মানসম্মান
•
সুমুখে => পিছনে
• মুই => তুই
• অনাহত => আহত
• অস্বচ্ছ => স্বচ্ছ
• কড়া => হালকা
• বিনীত => দুর্বিনীত
•
প্রৌঢ় => জোয়ান
• প্রত্যাখ্যান => স্বীকার: গ্রহণ
• নিষ্ঠুর => দয়ালু
• লোকসান => লাভ
• স্মরণ => বিস্মরণ
।। বাক্যরচনা ।।
• অবিশ্রান্ত => ঘণ্টা দুয়েক অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট জলে ডুবে গেছে।
• ক্রুদ্ধ => রানু ক্রুদ্ধ মেজাজে জবাব দিল।
• পরাজয় => প্রতিটি খেলাতেই জয় পরাজয় থাকে।
।। সন্ধি করো ।।
বৃষ্
+ তি, সম্ + বরণ, কাঁদ্ + না, অতি + অন্ত, অন্ + আত্মীয়, এক + অন্ত
উত্তর ॥>
• বৃষ্ + তি => বৃষ্টি
• সম্ + বরণ => সংবরণ
• কাপ্ + না => কান্না
• অতি + অন্ত => অত্যন্ত
• অন্ + আত্মীয় => অনাত্মীয়
• এক + অন্ত => একান্ত
।। নীচের
শব্দগুলির সন্ধি বিচ্ছেদ করো ।।
নিরুত্তর, নমস্কার, তারকেশ্বর, যথার্থ, প্রত্যাখ্যান, আশ্চর্য, তদ্বস্থা
উত্তর ॥>
• নিরুত্তর => নিঃ + উত্তর
• নমস্কার => নমঃ + কার
• তারকেশ্বর => তারক + ঈশ্বর
• যথার্থ => যথা + অর্থ
• প্রত্যাখ্যান => প্রতি + আখ্যান
• আশ্চর্য => আঃ + চর্য
• তদবস্থা => তৎ + অবস্থা
।। নীচে
দেওয়া শব্দগুলির দল বিশ্লেষণ করো ।।
অপরাহ্ন, অকস্মাৎ, আহ্বান, দক্ষিণ, উচ্ছিষ্ট, উত্তপ্ত, বিস্ফারিত, দীর্ঘশ্বাস, অশ্রুপ্লাবিত, হিন্দুস্থানি, অস্বচ্ছ
উত্তর ॥>
• অপরাহ্ণ => অ (মুক্ত) প (মুক্ত) রান্ (বদ্ধ) হো (মুক্ত)
• অকস্মাৎ => অ (মুক্ত) কস্ (রখ) স্যাঁৎ (রুদ্ধ )
• আহবান => আ (মুক্ত) হো (মুক্ত) বান্ (রুদ্ধ)
•
দক্ষিণ => দো (খ) ন্ (খ) উচ্ছিষ্ট (বৃদ্ধ) ছিস্ (বৃদ্ধ) টো
(মুক্ত)
• উচ্ছিষ্ট => উচ্ (মুক্ত) ছিস্ (মুক্ত) টো (মুক্ত)
• উত্তপ্ত => (বুদ্ধ) তপ (বৃদ্ধ) তো (মুক্ত)
• বিস্ফারিত => বিস (রখ) ফা (মুক্ত) রি (মুক্ত) তো (মুক্ত)
•
দীর্ঘশ্বাস => দিন (বুদ্ধ) ঘো (মুক্ত)
শ্বাস (বুদ্ধ)
• অনুপ্লাবিত => অস্ (খ) ব্লু (মুক্ত) পা
(মুক্ত) বি (মুক্ত) তো (মুক্ত) হিন্দুস্থানি (4) (র) মা () ()
• অস্বচ্ছ => অ (মুক্ত) সচ্ (বুদ্ধ) হো (মুক্ত)
।। নীচে দেওয়া
ব্যাসবাক্যগুলিকে সমাসবদ্ধ পদে পরিণত করো। কোনটি কী ধরনের সমাস তা নির্ণয় করো ।।
• জল ও কাদা => জলকাদা: দ্বন্দ্ব
• নয় আহত => অনাহত; নঞ তৎপুরুষ
• ত্রি অধিক দশ => গুয়োদশ; মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
• বেগের সহিত বর্তমান => সবেগে; সহায়ক বহুব্রীহি
• মড়ার জন্য কান্না => মড়াকান্না; নিমিত্ত তৎপুরুষ
• চণ্ডী পুজোর জন্য তৈরি যে
মণ্ডপ => চণ্ডীমণ্ডপ; নিমিত্ত তৎপুরুষ
।। নীচের
বাক্যগুলিকে নির্দেশ অনুযায়ী পরিবর্তন করো ।।
প্রশ্ন॥ কথাটা রমেশ বুঝিতে পারিল
না। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর ॥> কথাটা রমেশ শুনিল কিন্তু বুঝিতে পারিল না ।
প্রশ্ন॥ এ বাড়িতে আসিয়া যখন
প্রবেশ করিল তখন সন্ধ্যা হয় হয়। (সরল বাক্যে)
উত্তর ॥> আসন্ন সন্ধ্যার সময়ে এ বাড়িতে আসিয়া প্রবেশ করিল।
প্রশ্ন॥ ওরা যাবে কি? (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর ॥> ওরা যাবে না ।
প্রশ্ন॥ বেণীর এই অত্যন্ত অপমানকর
প্রশ্নের উত্তর দিবারও তাহার প্রবৃত্তি হইল না। (হ্যাঁ-বাচক বাক্যে)
উত্তর ॥> বেণীর এই অত্যন্ত অপমানকর প্রশ্নের উত্তর দিতে তাহার
প্রবৃত্তিতে বাধিল |
প্রশ্ন॥ তুমি নীচ, অতি ছোটো । (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর
॥> তুমি নীচ এবং অতি ছোটো |
প্রশ্ন॥ পথে আর এতটুকু কাদা পাবার
জো নেই দিদিমা ৷ (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর ॥> পথে আর এতটুকু কাদা পাবার জো কি আছে দিদিমা?
প্রশ্ন॥ মাসি উপরে ঠাকুরঘরে আবদ্ধ
থাকায় এ সকলের কিছুই জানিতে পারেন নাই । (জটিল বাক্যে)
উত্তর ॥> মাসি যেহেতু উপরে ঠাকুরঘরে আবদ্ধ ছিলেন তাই এসকলের
কিছুই জানিতে পারেন নাই |
।। নীচে
দেওয়া শব্দ দুটিকে দুটি আলাদা অর্থে ব্যবহার করে বাক্য রচনা করো ।।
( যাত্রা, বাঁধ )
উত্তর ॥>:
• যাত্রা => বীণা দাশগুপ্তা ছিলেন একজন জনপ্রিয় যাত্রা অভিনেত্রী।
যাত্রা
=> পুরীর উদ্দেশে বাসযাত্রা
মোটেই সুখকর ছিল না।
• বাঁধ => যাও পুত্র, খেতের আল বাঁধ গিয়ে ।
বাঁধ
=> বর্ষাকালে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে
বন্যা দেখা দেয়।
।। নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও ।।
প্রশ্ন॥ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উত্তর ॥> শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দুটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস
হল পল্লীসমাজ ও গৃহদাহ।
প্রশ্ন॥ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি ছোটোগল্পের নাম লেখো।
উত্তর ॥> শরৎচন্দ্রের লেখা দুটি অন্যতম ছোটোগল্প হল 'মহেশ' এবং 'লালু'।
প্রশ্ন॥ গোপাল সরকারের কাছে বসে
রমেশ কী করেছিল?
উত্তর
॥> চণ্ডীমণ্ডপে গোপাল সরকারের
কাছে বসে রমেশ জমিদারির হিসাবপত্র দেখছিল।
প্রশ্ন॥ গ্রামের একমাত্র ভরসা কী
ছিল ?
উত্তর ॥> একশো বিঘার মাঠটাই গ্রামের একমাত্র ভরসা ছিল। কারণ গ্রামের সমস্ত চাষিদের
কিছু কিছু জমি তাতে ছিল।
প্রশ্ন॥ ‘বোধ করি এই
কথাই হইতেছিল’ -- কোন কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে?
উত্তর ॥> গ্রামে যে একশো বিঘের মাঠ রয়েছে তা জলে ভরে গিয়ে
চাষিদের ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। চাষিরা জমিদার বেণী ঘোষালের কাছে গিয়ে বাঁধ কেটে জল
বের করার আর্জি জানিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। চাষিদের ব্যাপারে কথা বলতে রমেশ বেণী
ঘোষালের কাছে যখন যান তখন সেখানে বেণীর সঙ্গে হালদার মশাইও
বসেছিলেন। রমেশের মনে হল চাষিদের বাঁধ কেটে জল বের করে দেওয়ার আবেদন নিয়ে বেণী ও হালদার মশাই কথা বলছিলেন |
প্রশ্ন॥ রমা আকবরকে কোথায় পাহারা
দেবার জন্য পাঠিয়েছিল?
উত্তর
॥> গ্রামের একশো বিঘে জমির
দক্ষিণ দিকের বাধ ছিল জমিদার ঘোষাল ও মুখুজ্জেদের । রমেশ যাতে সেই বাঁধ
কেটে জল বের করতে না পারে সেইজন্য রমা আকবরকে পাহারা দিতে সেখানে পাঠিয়েছিল।
প্রশ্ন॥ ‘পারবি নে
কেন?’ - উদ্দিষ্ট ব্যাক্তি কোন্ কাজটি করতে পারবে না?
উত্তর ॥> উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি হল জমিদারকন্যা রমা মুখার্জিদের
পিরপুরের প্রজা লাঠিয়াল আকবর। বাঁধ পাহারা দিতে গিয়ে রমেশের লাঠির আঘাতে
সে আহত, তার রক্ত ঝরেছে। বেণী ও রমা
তাকে থানায় গিয়ে রমেশের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে বললে সে তা করতে পারবে না বলে
জানায়।
প্রশ্ন॥ কুড়িজন কৃষক রমেশের কাছে
এসে কেঁদে পড়ল কেন ?
উত্তর
॥> শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের
'পল্লীসমাজ' গল্পে গ্রামের একশো বিঘা জমির মাঠটা চাষিদের একমাত্র ভরসা। কারণ সেই মাঠেই
সকলের কিছুটা করে জমি রয়েছে। এবারে দুদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে সেই মাঠ ডুবে গিয়ে
ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। মাঠের পূর্বধারে খুব বড়ো সরকারি বাঁধ, পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে গ্রাম উঁচু। কেবল নীচু
দক্ষিণ দিকের বাঁধটা ঘোষাল ও মুখার্জিদের। চাষিরা জমিদার বেশী ঘোষালের কাছে গিয়ে
বাঁধ কেটে জল বের করার আবেদন জানায়। কিন্তু বছরে ২০০ টাকার মাছ বিক্রি হয় বলে
বেশী তাদের কথায় কর্ণপাত না করে তাড়িয়ে দিয়েছে। চাষিরা তখন এই সমস্যার
সমাধানের জন্য রমেশের কাছে এসে কেঁদে কেটে পড়ল।
প্রশ্ন॥ রমেশ বেণীর কাছে জল বার
করে দেবার হুকুম দেওয়ার জন্য অনুরোধ করল কেন ?
উত্তর ॥> একশো বিঘা জমির দক্ষিণ দিকের বাঁধের গায়ে যে জলা
জমিটি ছিল তার অধিকারী ছিল তিনজন—বেণী, রমা ও রমেশ। রমেশের
মনে হয়েছিল প্রজাদের দুরবস্থার কথা ভেবে বেণী ও রমা হয়তো
বাঁধ কেটে জল বের করতে আপত্তি করবে না। তাই সে তার সম্পর্কে বড়দা বেণী ঘোষালের
কাছে অনুরোধ জানায় এ যাত্রায় যাতে প্রজাদের চরম ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো যায়।
বাঁধ রক্ষার জন্য যে পাহারা বসানো ছিল বেণীর আদেশ ছাড়া সে পাহারা এড়িয়ে বাঁধ
কাটানো সম্ভব ছিল না।
প্রশ্ন॥ বেণী ভুল বার করতে চায়নি
কেন ?
উত্তর ॥> দুটি কারণে বেণী বাঁধ কেটে জল বের করতে চায়নি। বাঁধ
কেটে দিলে জলের সঙ্গে জলার মাছ বেরিয়ে গিয়ে তাদের ২০০ টাকা ক্ষতি হবে। তবে এই
দুশো টাকা ক্ষতির চাইতেও একটা লাভজনক তত্ত্ব বেণীর মাথায় খেলছিল। জল বার না করলে
চাষিদের সব ধান নষ্ট হয়ে যাবে। তখন চাষিরা না খেতে পেয়ে জমি-বাড়ি বন্ধক রেখে বেণীর কাছেই টাকা ধার করতে আসবে। এভাবেই বেণী
জমিদারি বাড়ানোর পক্ষপাতী ছিল। তাই সে জল বার করতে চায়নি ।
প্রশ্ন॥ 'ঘৃর্ণায়, লজ্জায়, ক্রোধে, ক্ষোডে রমেশের চোখ-মুখ উত্তপ্ত হইয়া উঠিল'—রমেশের এমন অবস্থা হয়েছিল কেন ?
উত্তর
॥> একশো বিঘার মাঠ জলে ভরে
যাওয়ায় চাষিদের ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কিন্তু জমিদার বেণী ঘোষাল
বাঁধ কেটে জল বার করতে রাজী হয়নি। তাই এ ব্যাপারে কথা বলতে রমেশ বেণীর কাছে গিয়ে
তাকে অনুরোধ জানায়। বেণী তাকে জানায় যে বাঁধ কাটলে জলের
সঙ্গে মাছ বেরিয়ে গিয়ে তাঁদের দুশো টাকা ক্ষতি হবে। তা ছাড়া, চাষিদের ধান নষ্ট হলে তারা নিরুপায় হয়ে তাঁদের
কাছেই জমি-জমা বন্ধক রাখতে বাধ্য হবে। সেই সুযোগে বেণী জমিদারী
বাড়াতে পারবে। বেণীর এরকম নীচ ও হীন মনোবৃত্তির পরিচয় পেয়ে তার প্রতি ঘৃণায়, লজ্জায়, ক্রোধে, ক্ষোভে রমেশের চোখ-মুখ
উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।
প্রশ্ন॥ 'রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া গেল'— রমেশের বিস্ময়ের কারণ কী ছিল?
উত্তর
॥> বেণীর কাছে প্রত্যাখ্যাত
হয়ে রমেশ জমিদারির অপর অংশীদার রমার কাছে গিয়েছিল। রমেশ রমার সম্বন্ধে উচ্চ
ধারণা পোষণ করত। সে ভেবেছিল চাষিদের সমস্যার কথা শুনে রমা হয়তো তার মতোই বাঁধ
কাটতে দিতে রাজি হবে। কিন্তু রমা যখন বলে যে সে অতগুলো টাকা লোকসান করতে পারবে না
তখন রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন॥ রমা রমেশের অনুরোধে রাজি
হয়নি কেন ?
উত্তর
॥> একশো বিঘা জমির দক্ষিণ
দিকের বাঁধের গায়ের জলা জমিটির অংশীদার হল বেশী ঘোষাল, রমা ও তার নাবালক ভাই এবং রমেশ। প্রথমত বেণী বাঁধ
কাটাতে রাজি হয়নি। দ্বিতীয়ত রমা তার নাবালক ভাইয়ের হয়ে জমিদারি দেখাশোনা করছে।
তাই বাঁধ কেটে দিলে জলের সঙ্গে মাছ বেরিয়ে গেলে যে দুশো টাকা ক্ষতি হবে তা মেনে
নেওয়া তার পক্ষে উচিত হবে বলে সে মনে করেনি। ফলে রমা রমেশের অনুরোধে রাজি হয়নি।
প্রশ্ন॥ ‘মানুষ খাঁটি কিনা, চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে’–কে কার সম্পর্কে এ কথা বলেছিল ? সে কেন এ কথা বলেছিল ?
উত্তর
॥> শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রচিত ‘পল্লীসমাজ’ গল্পে রমেশ রমা-এর সম্পর্কে একথা বলেছিল।
॥> রমেশের মনে স্থির বিশ্বাস ছিল যে চাষিদের চরম
সর্বনাশের দিনে রমা তাদের পাশে দাঁড়াবে। তাই বেণী ফিরিয়ে দিলে রমেশ রমার
কাছে যায়। কিন্তু রমা প্রথমে বলে যে সে ২০০ টাকা ক্ষতি স্বীকার করতে পারবে না।
সেই সঙ্গে বিদ্রুপের সঙ্গে রমেশকে জানায় যে চাষিদের হয়ে সেই না হয় ক্ষতির
টাকাটা দিয়ে দিক। রমার কথা শুনে তার সম্বন্ধে এতদিনকার ধারণা ভেঙে যায় রমেশের।
অত্যন্ত হীন মনে হয় তাকে। তাই রমেশ একথা বলেছিল রমাকে।
প্রশ্ন॥ 'রমা বিহ্বল হতবুদ্ধির ন্যায় ফ্যালফ্যাল
করিয়া চাহিয়া রহিল'—রমার এমন অবস্থা হয়েছিল
কেন ?
উত্তর
॥> চাষিদের বিপদ থেকে রক্ষা করতে বাঁধ কাটানোর
অনুরোধ নিয়ে রমেশ প্রথমে বেশী ঘোষাল ও তারপর রমার কাছে যায়। বেণীর মতো রমাও
বাঁধ কেটে মাছ বিক্রির ২০০ টাকা ক্ষতি স্বীকার করতে রাজি হল না। সেই সঙ্গে রমা
বিদ্রূপের সুরে রমেশকে জানায় যে চাষিদের হয়ে সেই ক্ষতিপূরণের টাকাটা দিয়ে দিক।
এই কথা শুনে রমেশের মাথায় আগুন জ্বলে
যায়। যে রমার সম্বন্ধে সে উচ্চ ধারণা পোষণ করত তার এমন হীন মনোবৃত্তির পরিচয়
পেয়ে রমেশ ক্ষেপে ওঠে। রমেশ তাকে হীন, নীচ এবং মানুষের দয়ার উপর জুলুমকারী হিসেবে তিরষ্কার করে। রমার সম্বন্ধে
রমেশকে এরুপ ধারণা
করতে দেখে 'রমা বিহ্বল
হতবুদ্ধির ন্যায় ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
প্রশ্ন॥ রমা আকবরকে ডেকে এনেছিল
কেন?
উত্তর: রমাদের জমিদারির পিরপুরের প্রজা ছিল আকবর। সে
ছিল লাঠিয়াল সর্দার। রমা বাঁধ কাটাতে রাজি না হওয়ায় রমেশ তাকে বলে যে সে তখনই
বাঁধ কাটিয়ে দেবে। রমা পারলে যেন তা আটকানোর চেষ্টা করে। সেই জন্য রমা বাঁধ
পাহারা দিতে আকবরকে ডেকে এনেছিল ।
প্রশ্ন॥ 'মোরা নালিশ করতি পারব না'-কে একথা বলেছে ? সে নালিশ করতে পারবে না কেন ?
উত্তর
॥> রমাদের জমিদারির পিরপুরের প্রজা লাঠিয়াল
সর্দার আকবর একথা বলেছে।
॥> আকবর লাঠিয়াল সর্দার। তার আত্মসম্মানবোধ প্রবল ।
রমেশকে বাঁধ কাটানোয় বাধা দিতে গিয়ে তার লাঠির আঘাতে আকবর আহত ও রক্তাক্ত
হয়েছে। তবু সে বেণী কিংবা রমার প্ররোচনায় থানায় গিয়ে রমেশের নামে মিথ্যে
নালিশ জানাতে রাজি হয়নি। প্রথমত পাঁচখানা গ্রামের লোক তাকে সর্দার বলে মানে। তার
পরাজয়ের কথা ফলাও করে বলতে গেলে আকবরেরই মান ইজ্জত থাকবে
না। আর দ্বিতীয়ত, রমেশ একজন সাচ্চাদিল লাঠিয়াল।
আকবরকে প্রথমে সে সাবধান করে দিয়েছিল। তাই তার নামে মিথ্যে অভিযোগ আকবর করতে
পারবে না।
প্রশ্ন॥ নইলে আর ব্যাটাদের ছোটোলোক
বলেছে কেন?'— বক্তা কে ? এই উক্তির মধ্যে দিয়ে বক্তার চরিত্রের কী পরিচয় পাও ?
উত্তর
॥> শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রচিত 'পল্লীসমাজ' গল্পে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা জমিদার বেণী ঘোষাল।
॥> একশো বিঘার মাঠ জলে ডুবে গিয়ে চাষিদের ধান নষ্ট হতে
বসেছে। চাষিরা গিয়ে বেণী ঘোষালকে কাতর আবেদন জানায় বাঁধ কাটিয়ে জল বের করে
দেবার জন্য। কিন্তু বেণী ঘোষাল নির্বিকার। একথা শুনে বাঁধের আর এক শরিক রমেশ বেণীর
কাছে যায়। কিন্তু বেণী রাজি তো হয়ই না উপরন্তু চাষিদের ছোটোলোক বলে গালাগালি
দেয়। উদ্ধৃত উক্তিটির মাধ্যমে। বক্তার হীন ও নীচ মানসিকতা, মানবিকতাহীন বিষয়সর্বস্ব শোষক জমিদারি চরিত্রটি
প্রকাশ পেয়েছে।
প্রশ্ন॥ বেণী, রমা ও রমেশ চরিত্র তিনটির তুলনামূলক আলোচনা করো।
সেইসঙ্গে এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে কোন্ চরিত্রটি তোমার সবথেকে ভালো লেগেছে এবং কেন
তা জানাও।
উত্তর
॥> শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রচিত "পল্লীসমাজ' পাঠ্যাংশের তিনটি প্রধান
চরিত্র হল বেণী ঘোষাল, রমা এবং রমেশ।
• বেণী ঘোষাল ॥> বেণী ঘোষালের চরিত্রে মধ্যযুগীয়
সামন্ততান্ত্রিক জমিদারের বৈশিষ্ট্যগুলি বর্তমান। সে হৃদয়হীন, রুচিহীন, আত্মসর্বস্ব শোষক জমিদারের প্রতিচ্ছবি। পূর্বপুরুষের কাছ থেকে যে জমিদারি সে
পেয়েছে তাকে যেকোনো উপায়ে বাড়িয়ে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়াই তার প্রধান
লক্ষ্য। দরিদ্র চাষিদের জন্য তার এতটুকুও সহানুভূতি নেই। উল্টে ধান নষ্ট হলে
মহাজনী কারবার ফেঁসে চাষিদের শোষণ করার আগাম হিসেব সে করতে থাকে। চাষিদের সে
ছোটোলোক বলেছে। সে কাপুরুষ, প্রতিহিংসাপরায়ণ রমেশকে
জেলে পাঠাবার জন্য তার নামে থানায় মিথ্যা নালিশ করতে
আকবরকে জোরাজুরি করে। ফলে বেণীএকজন অমানবিক, অসৎ, লোডী ও কপট চরিত্র হিসেবেই
ধরা দেয়।
• রমা ॥> জমিদার পরিবারের কন্যা, নাবালক ভাইয়ের অভিভাবক রমা চরিত্রের নানা রূপ
এই স্বল্প পরিসরে গল্পকার এঁকেছেন। নারী হয়েও জমিদারি রক্ষার জন্য যতটা কঠোর
হওয়া প্রয়োজন, রমা ততটাই কঠোর। তবে
চাষিদের শস্যের ক্ষতির জন্য সে জমিদারীর দুশো টাকা ক্ষতি স্বীকার করতে রাজি না
হওয়ায় তার স্বার্থপর চরিত্রেরই প্রকাশ ঘটেছে। রমেশের সঙ্গে কথাবার্তায় তার
ব্যক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। তবে বেণীর থেকে রমা একটু হলেও আলাদা। রমেশ বাঁধ
কাটিয়ে দেওয়ায় মনে মনে সে খুশিই হয়েছে। তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালানো
পল্লিগ্রামের নারী রমার রমেশের প্রতি গোপন অনুভূতিও এই স্বল্প পরিসরে প্রকাশিত
হয়েছে।
• রমেশ ॥> জমিদার রমেশ, বেণী ও রমার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
প্রজাদের বিপদের দিনে সে তাদের বন্ধু ও অভিভাবকের মতো পাশে
দাঁড়িয়েছে। তাদের মারাত্মক বিপদ থেকে রক্ষা করেছে। শুধু তাই নয় গ্রামের মানুষের
চলাফেরার সুবিধার জন্য পাকা রাস্তা বানিয়ে দিয়েছে। শোষক জমিদার নয়, তার মধ্যে দয়ালু অভিভাবকের রূপটি প্রত্যক্ষ করা
যায়। রমেশের আচার-ব্যবহার, কর্তব্যবোধ, যুক্তিবোধ, পৌরুষ, বিষয় অপেক্ষা সাধারণ
মানুষের প্রতি ভালোবাসা তাকে অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করেছে। রমেশের রুচিবোধ, ব্যক্তিত্ব, মানবিক গুণ, অন্যের বিপদের দিনে সর্বস্ব
দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া —এইসব কারণে রমেশের চরিত্রটি আমার ভালো লেগেছে।
প্রশ্ন॥ 'পল্লীসমাজ' পাঠ্যাংশে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার কোনো নিদর্শন পেয়ে থাকলে সে সম্পর্কে
আলোচনা করে।। এধরনের ব্যবস্থার সুফল ও কুফল সম্বন্ধে আলোচনা করো।
উত্তর ॥> মধ্যযুগে জমিদারি ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলায়
সামন্ততন্ত্র প্রতিষ্ঠালাভ করেছিল। এই ব্যবস্থায় সামান্য কিছু মানুষ পরিশ্রম না
করেই প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠত, আর একশ্রেণির মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করে ও আধ-পেটা খেয়ে সর্বহারাতে পরিণত হত।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা "পল্লীসমাজ' পাঠ্যাংশে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার এই বাস্তবরূপ হুবহু
ফুটে উঠেছে। জমিদার বেণী ঘোষাল প্রজাদের সুখের কথা বিন্দুমাত্রও চিন্তা না করে কীভাবে
নিজের জমিদারির সম্পত্তি বাড়ানো যায় সবসময় তার চিন্তা করেছে। প্রজারা ছিল তার চোখে ছোটোলোক। তারা বিপদে পড়লে তাদের সম্পত্তি বন্ধক নেওয়ার মাধ্যমে সে নিজের সম্পত্তি বাড়াতে চায়। তার পূর্বপুরুষরা এভাবে
জমিদারি বাড়িয়েছে - সে কথা সে রমেশকেও বলেছে। আবার রমেশ যাতে বাঁধ কাটাতে না
পারে সেজন্য সে ও রমা লাঠিয়াল সর্দার আকবরকে বাঁধ পাহারা দিতে পাঠিয়েছে। রমেশকে
জব্দ করার জন্য সে শাসনব্যবস্থাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে, যদিও আকবর তার কথায় রাজি হয়নি।
সামন্ততান্ত্রিক
ব্যবস্থার সুফল ও কুফল: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার সুফল বলতে গেলে রমেশের
মতো প্রজাদরদি জমিদারদের কথা বলতে হয়। তারা প্রজাদের স্বার্থরক্ষায় সবসময় সচেষ্ট থাকত। আর জমিদাররা নিজেদের স্বার্থে লেঠেল বাহিনী রাখত, ফলে বাইরের শত্রুদের
হাত থেকে প্রজারা সুরক্ষিত থাকত। এ ছাড়া সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার
শুধু কুফলই চোখে পড়ে। (ক) অত্যাচারী জমিদারদের হাতে প্রজারা সর্বস্ব হারিয়ে
জনমজুরে পরিণত হয়। (খ) চরম শ্রেণিবৈষম্যের উদ্ভব হয় এই সময়ে। (গ) জমিদারের
অত্যাচারে দলে দলে মানুষ ভিটেমাটি ছেড়ে শহরে চলে যায়। (ঘ) কৃষি- উৎপাদন ব্যবস্থা
মার খায়। (৬) সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার কুফল হিসেবে প্রজা ও কৃষক বিদ্রোহ দেখা
দিয়ে থাকে।
0 Comments